কাচা আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা | আদার গুনাগুন | সকালে খালি পেটে আদা খাওয়া

কাচা আদা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। আদা প্রকৃতির একটি অন্যতম আশীর্বাদ। আদার গুণাগুণে সবসময়ই মুখর চিকিৎসকরা। তবে কখনো কখনো আদা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকরও বটে।

আদা

আদা কি?

আদাকে মূলত বেশিরভাগ সময় মসলা হিসেবেই ব্যবহার করা হয়। সে হিসেবে আদাকে মসলাই বলা চলে। তবে মসলা হলেও এর রয়েছে অনেক ভেষজ গুণ। নানা রোগ নিরাময় ও পুষ্টি গুণে এর জুড়ি মেলা ভার। দারুণ এক ভেষজ ঔষধি হিসেবে প্রাচীন কাল থেকেই আদার ব্যবহার রয়েছে।

কথায় বলে ‘আদা হচ্ছে সকল রোগ নিরাময়ের দাদা’। যার অর্থ আমাদের শরীরের সব রোগ নিরাময়ের জন্য আদা যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে সক্ষম। আদায় রয়েছে পটাশিয়াম, আয়রণ, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন এ, বি৬, ই ও সি এবং অ্যান্টি–ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট ও অ্যান্টি–ইনফ্লামেটরি এজেন্ট। যার কারনে সব বয়সী মানুষ কম বেশি আদা খেতে পারেন, বিশেষ করে শিশুদের জন্য আদা+মধু+পানি শরীর ও মনের জন্য খুবই কার্যকর।

কাচা আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
কাচা আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আদার গুনাগুন সকালে খালি পেটে আদা খাওয়া

আসুন আমরা জেনে নিই আদা খাওয়ার উপকারিতা কি কিঃ

পেটের সমস্যায় ও গ্যাস্ট্রিকে আদা খাওয়ার উপকারিতাঃ

পেট খারাপ হলে ঘরোয়া একটি উৎকৃষ্ট উপায় হলো আদা খাওয়া। পেট খারাপের বিরুদ্ধে আদা খুবই উপকারী একটি খাদ্য। এটি পেট খারাপ হওয়া প্রতিরোধ করে। পাশাপাশি এর গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট পেটের পেশি শিথিল করে, এরফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও দূর হয়। তাই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে আদা খেতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ  এপেন্ডিসাইটিস কেন হয় : কারণ, লক্ষণ,কি,নিরাময়, চিকিৎসা

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আদা খাওয়ার উপকারিতাঃ

আদা রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেক সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশ সাহায্য করে। যার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। এছাড়াও আদায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, যা হার্ট বা হৃৎপিণ্ডের জন্য অত্যন্ত ভালো।

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ও বিকেলে দুবেলা এক চা–চামচ করে আদার রস, লেবুর রস ও মধু এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে চায়ের মতো করে খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কাজে আসবে। ডায়েবেটিস রোগীদের মধু বাদ দিয়ে খেতে হবে।

কাশি ও গলা ব্যথায় আদা খাওয়ার উপকারিতাঃ

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ও বিকেলে দুবেলা এক চা–চামচ করে আদার রস, লেবুর রস ও মধু এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে চায়ের মতো করে খেলে খুশখুশে কাশি কমে, গলার কফও দূর হয়।

মাইগ্রেন, সাইনাস, গলা ও মাথাব্যথায় আদা খাওয়ার উপকারিতাঃ

তাৎক্ষণিক সমাধানের জন্য সামান্য একটু লবণ দিয়ে কাঁচা আদা চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে হবে। কিন্তু রোগ সারাতে হলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ও বিকেলে দুবেলা এক চা–চামচ করে আদার রস, লেবুর রস ও মধু এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে চায়ের মতো করে খেলে মাইগ্রেনের সমস্যা দূর হবে। পাশাপাশি যদি আপনার গলা ব্যথার সমস্যা হয় তাহলেও আদার চা খেতে পারেন। কারণ, এটি একটি প্রাকৃতিক পেইন কিলার বা ব্যথা নাশক গুলোর মধ্যে অন্যতম। গলা ব্যথা কমাতে হলে তাই আদা খাওয়ার উপকারিতা  অনেক।

আদা খেলে মুখে রুচি আসে, ক্ষুধা বাড়ায়, হজম শক্তি বাড়ে। সামান্য লবণ দিয়ে কাঁচা আদা কুচি চিবিয়ে চিবিয়ে খেলে খাওয়ার রুচি বাড়ে।

কিডনী ও মূত্রজনিত সমস্যায় আদা খাওয়ার উপকারিতাঃ

কিডনী ও মূত্র জনিত যেকোনো সমস্যা হলে খেতে পারেন কাচা আদা। এতে থাকা ভিটামিন-বি৬ কিডনী ও মূত্র জনিত যেকোনো সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। আমাশয় জাতীয় সমস্যায়ও আদা বেশ কার্যকরী একটি ওষুধ হিসেবে কাজ করে।

আরো পড়ুনঃ  Symptoms and home remedies for migraine:2024

ক্যান্সার প্রতিরোধে কাচা আদা খাওয়ার উপকারিতাঃ

কাচা আদায় রয়েছে অ্যান্টি-ভাইরাল, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল। আই আদা ক্যান্সার প্রতিরোধী হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এটি ক্যান্সারের মতো ভয়ংকর রোগের ঝুঁকি কমাতে অনেক সাহায্য করে। কাচা আদা নিয়মিত খেলে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষ ধ্বংস করে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও ক্ষত দূর করতেঃ

আদা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। পাশাপাশি দাঁতের যত্নেও এটি অনেক উপকারী। এছাড়াও আদাতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান যা দেহের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত সারাতে বেশ দারুণ কার্যকর। তাই দেহের কোথাও কেটে গেলে বা জখম হলে বেশি করে আদার রস খান। এছাড়াও বমি বমি ভাব দূর করতে আদা অনেক সাহায্য করে। বমি বমি ভাব হলে আদা খেলে বমি বমি ভাব দূর হয়।

কাচা আদা খাওয়ার নিয়মঃ

আদা একটি ঔষধি উদ্ভিত। এর থেকে প্রচুর ঔষধি উপকারিতা পাওয়া যায় তা আমরা জেনে গেছি। এখন আমাদের কাচা আদা খাওয়ার নিয়ম জানতে হবে? রান্নায় আমরা প্রায় প্রতিদিনই কমবেশি কাচা আদা ব্যবহার করি এবং খাই। তবে রান্না করা অথবা শিদ্ধ আদা খেলে এর থেকে উপকার সামান্যই পাওয়া যায়।

কাচা আদা থেকে সম্পূর্ণভাবে উপকার বা এর ঔষধি গুণ পেতে হলে নিয়ম অনুযায়ী এটি খেতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী এটি ছেঁচে বা পিষে খাওয়া যায়। এছাড়া এক চা–চামচ করে আদার রস, লেবুর রস ও মধু এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে চায়ের মতো করে  খাওয়া যায়। এছাড়া ছোট টুকরো করে কেটে হালকা লবন দিয়ে কাঁচা খাওয়া যায়।

কাচা আদার অপকারিতা বা কখন ক্ষতিকরঃ

গর্ভাবস্থায়ঃ আদার মধ্যে এমন অনেক রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা পেশীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও হজমে সাহায্য করে। গর্ভকালীন অবস্থায় বেশি বেশি আদা খেলে তা পেশীর সংকোচন ঘটিয়ে প্রিটার্ম লেবরের সৃষ্টি করতে পারে। তাই অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আদা খান।

আরো পড়ুনঃ  What are the symptoms of food poisoning and how long does it last

রক্তজনিত রোগঃ আদা শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে খুব সাহায্য করে। OBCT বা ডায়াবেটিসের সমস্যায় তাই কাচা আদা খাওয়া অনেক উপকারি। আবার HEMOPHILIA সমস্যা থাকলে এই কাচা আদার ঔষধি গুণ নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। HEMOPHILIA বংশগত সমস্যা। HEMOPHILIA এর ওষুধের সঙ্গে কাচা আদা খেলে তা ওষুধের প্রভাবে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে।

কম ওজনঃ যদি আপনি ওজন বাড়ানোর চেষ্টা করে থাকেন তা হলে কাচা আদাযুক্ত খাবার বা কাচা আদা চা খাওয়া এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করুন। আদার মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। যা পাকস্থলীর PH এর মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে পরিপাকতন্ত্রকে উত্তেজিত করে তোলে।

বিশেষায়িত ঔষধ খাওয়ার সময়ঃ HYPERTENSION বা ডায়াবেটিসের ওষুধ খাওয়ার সময় কাচা আদা খাওয়া এড়িয়ে চলাই ভাল। আদা রক্তকে পাতলা করে রক্তচাপ কিছুটা কমিয়ে দেয়। তাই সাধারণভাবে আদা খাওয়া উপকারী হলেও ANTICOAGULANT, BETA BLOCKERS বা ইনসুলিনের মতো ওষুধের প্রভাব কমিয়ে দিতে পারে এই কাচা আদা।

তথ্যসূত্রঃ Wikipedia

Leave a Comment

WordPress Lightbox