এক পলকে
ভিসা কার্ড কি
ভিসা কার্ড হচ্ছে একটি আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেম কার্ড যা অর্থনৈতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে যুক্তরাস্ট্র ভিত্তিক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি ভিসা এটি কার্ড হিসেবে আর্থিক লেনদেনে সেবা প্রদান করে থাকে এবং এটি পেমেন্ট কার্ড যেমন- ডেবিট কার্ড ,ক্রেডিট কার্ড ,প্রিপেইড কার্ড ইত্যাদি হিসেবে সেবা প্রদান করে থাকে। মাস্টার কার্ড কি ?
অর্থাৎ সহজ কথায় ভিসা কার্ড বলতে বুঝায় এটি বিশ্বে অর্থনৈতিক লেনদেনের একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃত মাধ্যম যা একটি কার্ডের মাধ্যমে সেবা প্রদান করে থাকে।
ভিসা কার্ড এর ব্যবহার
এই জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক স্বীকৃত কার্ডটি আপনাকে আর্থিক লেনদেন এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাবে সেবা প্রদান করে থাকবে। যেসব ক্ষেত্রে আপনি এই কার্ডটি দ্বারা উপকৃত হতে পারবেন তা সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো –
১.আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা :বিশ্বের প্রায় ২০০ টিরও বেশি দেশে এর ব্যবহার রয়েছে। বিভিন্ন দেশের দোকান ,রেস্তোরা ,অনলাইন শপিং ,এটিএম সেন্টার,ব্যাঙ্ক লেনদেন ইত্যাদি ক্ষেত্রে এর গ্রহণ যোগ্যতা অধিক।
২.নিরাপদ লেনদেন :কার্ডের চিপ টেকনোলজি ও পিন নম্বরের নিরাপত্তা বৈশিষ্টের কারণে এটি সেবাগ্রহণকারীকে সুরক্ষিত লেনদেনে সাহায্য করে।
৩.লেনদেনের সহজলভ্যতা :খুব সহজেই ভিসা কার্ডটি ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অনলাইন শপিং করতে পারবেন।
৪.ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড হিসেবে সুবিধা :ডেবিট কার্ডের ক্ষেত্রে আপনার ব্যাঙ্ক একাউন্ট থেকে টাকা সরাসরি কাটবে এবং ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ক্রেডিট সীমার ভিত্তিতে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা ধার নিয়ে আবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ করে দেওয়া যায়।
ভিসা কার্ডের প্রকারভেদ
সাধারণত তিন ধরণের ভিসা কার্ড ব্যবহার করা হয়ে থাকে। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো –
১.ডেবিট কার্ড :এই কার্ডটি আপনার ব্যাঙ্ক একাউন্টের সাথে সরাসারি যুক্ত থেকে আপনার ব্যাঙ্ক একাউন্ট থেকে সরাসরি টাকা কেটে নেওয়া হয়।
২.প্রিপেইড কার্ড :এই কার্ডটি কোনো ব্যাঙ্ক একাউন্টের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকেনা এবং এটি থেকে আপনি টাকা আগে থেকে লোড করে ব্যবহার করতে পারবেন।
৩.ক্রেডিট কার্ড :ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক থেকে আপনি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে টাকা ধার নিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন।
আবার ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে ভিসা বিভিন্ন ধরণের ক্রেডিট কার্ড অফার করে থাকে। নিচে ক্রেডিট কার্ডের বিভিন্ন ধরন তুলে ধরা হলো –
১.ভিসা ক্লাসিক ক্রেডিট কার্ড :জনপ্রিয় এই কার্ডটি ব্যবহারকারী তার দৈনিন্দন কেনাকাটা বিভিন্ন ধরনের শপিং তাছাড়া ট্রাভেলিং ও ডাইনিং ট্রানজেকশকন করার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করে থাকে।
২.ভিসা গোল্ড ক্রেডিট কার্ড :ভিসা গোল্ড ক্রেডিট কার্ড ভিসা ক্লাসিক ক্রেডিট কার্ড এর তুলনায় অধিক ক্রেডিট সীমা ও সুবিধা প্রধান করে থাকে। এই কার্ডটি ভ্রমণ বিষয়ক সুবিধা ও বিশেষ কিছু অফার দিয়ে থাকে।
৩.ভিসা প্লাটিনাম ক্রেডিট কার্ড:উচ্চ আয়ের ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে মূলত এই কার্ডটি ডিজাইন করা হয়েছে। এটি বিভিন্ন ধরনের প্রিমিয়াম সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে যেমন: বিমানবন্দর লাউঞ্জ এক্সেস,ইলেকট্রনিক রিটেইল স্টোর,আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিমা,ভ্রমণ বিমা,লিডিং হোটেল,মেডিকেলে স্টোর ইত্যাদি সেবা দিয়ে থাকে।
৪..ভিসা সিগনেচার ক্রেডিট কার্ড:এই কার্ডটি বিশেষত ট্রাভেল ইন্সুরেন্স,ব্যক্তিগত কনসিয়ার্জ সেবা এছাড়া হোটেল,ট্রাভেল,শপিং ইত্যাদি উচ্চ-স্তরের সেবা প্রদান করে থাকে। এটি ব্যবহারকারীরা অনেক রকমের রিওয়ার্ড ও পয়েন্ট সংগ্রহ করতে পারেন।
৫.ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড:এটি সর্বোচ্চ স্তরের প্রিমিয়াম কার্ড।এটি বিশেষ প্রিভিলেজ দেওয়ার মাধ্যমে ব্যবহারকারী ভ্রমণ সুবিধা,ব্যক্তিগত বিমা,ফ্রি লাউঞ্জ অ্যাক্সেস ইত্যাদি সেবা দিয়ে থাকে এটিও বিভিন্ন ধরনের রিওয়ার্ড ও পয়েন্ট দিয়ে থাকে।
ভিসা কার্ড কোথায় পাওয়া যায়
যেহেতু এটি একটি আর্থিক লেনদেনের বিষয় তাই এই কার্ডটি ইস্যুও করে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক সমূহ। অর্থাৎ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক সমূহ এই কার্ডটি ইস্যু করে থাকে তাই এই কার্ডটি পেতে হলে আপনাকে বিভিন্ন সরকারি অথবা বেসরকারি ব্যাংককের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। যে সকল ব্যাঙ্ক সমূহ ভিসা কার্ড ইস্যু করে থাকে তার মধ্যে ডাচ বাংলা ব্যাংক,শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক,ইসলামী ব্যাংক, প্রভৃতি ব্যাঙ্ক সমূহ অন্যতম । এছাড়াও কিছু স্থানীয় ব্যাংক যেমন : ব্র্যাক ব্যাংক, এইচএসবিসি, ডাচ-বাংলা ব্যাংক,ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (EBL) ,সিটি ব্যাঙ্ক সমূহও এই কার্ডটি ইস্যু করে থাকে।
এছাড়াও এই কার্ডটির জন্য অনলাইনেও আবেদন করা যায়। এক্ষেত্রে আপনাকে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাঙ্ক সমূহের ওয়েবসাইটে আবেদন করতে হবে অথবা আপনি ব্যাংকের গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে গিয়ে সরাসরি আবেদন করতে পারেন।
ভিসা কার্ড কিভাবে করতে হয়
প্রথমে আপনার পছন্দনীয় একটি ব্যাঙ্ক নির্বাচন করুন যেটি ভিসা কার্ড ইস্যু করে। অতঃপর কার্ডের ধরণ নির্বাচন করুন(যেমন: ক্রেডিট কার্ড,ডেবিট কার্ড অথবা প্রিপেইড কার্ড) এবং কিছু প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দিন। নিম্নোক্ত নথিপত্র জমা দিতে হবে।
ভিসা কার্ড করতে প্রয়োজনীয় নথিপত্র
জাতীয় পরিচয়পত্র (NID): আপনার ব্যক্তিগত পরিচয় পত্র প্রমাণের জন্য।
আয়ের প্রমাণপত্র: বেতন স্লিপ বা ট্যাক্স রিটার্ন, ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
পাসপোর্ট সাইজ ছবি: ২ কপি।
অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন অনুযায়ী।
অতঃপর ব্যাংকের ফর্ম পূরণ করে আপনার তথ্য এবং নথিপত্র জমা দিন।ব্যাংক আপনার আবেদন যাচাই করবে ও প্রয়োজনীয় চেক সম্পন্ন করার পর আপনার জন্য ভিসা কার্ড ইস্যু করবে।
ভিসা কার্ড করতে খরচ কেমন
ভিসা কার্ড করতে চার্জ কেমন লাগে তা নির্ভর করে কার্ডের ধরন ও কোন ব্যাংকে কার্ড করবেন তার উপর। এখন বাংলাদেশে ভিসা কার্ড করতে কেমন খরচ তা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো –
সাধারণত প্রথম বার ভিসা কার্ড করতে বেশিরভাগ ব্যাংকে ৫০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত প্রাথমিক ফি করে থাকে এবং এই কার্ডের ধরন অনুযায়ী এর বার্ষিক ফি নির্ধারিত হয়। সাধারণত কার্ডের ভিন্নতা অনুযায়ী এর বার্ষিক ফি ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রিমিয়াম বা গোল্ড কার্ডের বার্ষিক ফি আরো বেশি হতে পারে।
আবার আপনি যদি কার্ডটি হারিয়ে ফেলেন এবং পুনরায় ইস্যু করতে আলাদা চার্জ প্রযোজ্য হয় তবে এই চার্জ সাধারণত ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। আবার বিদেশি লেনদেনের ক্ষেত্রে আলাদা চার্জ প্রযোজ্য হয়।
ভিসা কার্ড কিভাবে পেমেন্ট করে
ভিসা কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে পেমেন্ট করা খুবই সহজ। অনলাইন বা অফলাইনে দুইভাবেই পেমেন্ট করা যায় এটি ব্যবহার এর মাধ্যমে।
অনলাইন পেমেন্ট পদ্ধতি :প্রথমে অনলাইন সাইটে গিয়ে আপনার সেবা নেওয়ার পর যখন পেমেন্ট করার সময় আসবে তখন আপনাকে পেমেন্ট অপশনে গিয়ে ভিসা বা ক্রেডিট \ডেবিট কার্ড সিলেক্ট করতে হবে। অতঃপর কার্ডের তথ্য যেমন :কার্ড নম্বর,মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ,সিভিভি নিয়ম অনুসরণ করুন ফলে ব্যাঙ্ক আপনাকে একটি OTP পাঠাবে এবং উক্ত কোড টি দিয়ে আপনার পেমেন্ট নিশ্চিত করুন ।
ভিসা ডেডিট কার্ডে *বিকাশ টু ব্যাঙ্ক *করুন
এখন ব্যাংক একাউন্টে টাকা জমা দেওয়ার জন্য আর ব্যাংকে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। ভিসা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে যে কোনো সময় আপনি ব্যাঙ্ক একাউন্টে টাকা জমা দিতে পারবেন। ভিসা ডেবিট কার্ডের ১৬ ডিজিট নাম্বার টাইপ করে কোনো কাগজপত্র ও ফর্ম পুরণ ছাড়াই আপনি টাকা জমা দিতে পারবেন কোনো প্রকার জামেলা ছাড়া অনায়াসেই এবং আপনার সময়ও বাঁচবে। তাই বিকাশ অ্যাপ থেকে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে ভিসা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে * বিকাশ টু ব্যাংক* করুন ঘরে বসেই।
ভিসা ডেবিট কার্ডের সাহায্যে *বিকাশ টু ব্যাংক* কীভাবে করবেন
>বিকাশ অ্যাপে যান
>*বিকাশ টু ব্যাংক* অপশন থেকে ‘কার্ড’ অপশনটি নির্বাচন করুন
>১৬ ডিজিটের ভিসা ডেবিট কার্ড নাম্বার দ্বারা অ্যামাউন্ট সিলেক্ট করুন
>বিকাশ একাউন্টের গোপন পিন নাম্বার দিন
কোন ব্যাঙ্ক ভিসা কার্ডের জন্য ভালো
আপনি যদি ভিসা কার্ড বানাতে চান তাহলে আপনাকে আগে জানতে হবে কোন ব্যাঙ্ক ভিসা কার্ডের জন্য ভালো। চলুন জেনে নেওয়া যাক জনপ্রিয় কিছু ব্যাঙ্ক সম্পর্কে যারা ভিসা কার্ড ইস্যু করে।
তথ্য মতে ডাচ বাংলা ব্যাংকের ভিসা কার্ড অনেক ভালো এবং ইনস্ট্যান্ট ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকের ভিসা কার্ড সবচেয়ে ভালো বলে পরিচিত।এছাড়াও ইসলামী ব্যাংকেরও ভিসা কার্ড ইস্যু করার ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা রয়েছে। নিচে ভিসা কার্ড ইস্যু করে এমন কিছু ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
১. ডাচ্-বাংলা ব্যাংক (DBBL):এই ব্যাংকটি শক্তিশালী অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি এটি সর্বাধিক ATM এবং POS নেটওয়ার্ক প্রদান করে থাকে ফলে খুব সহজেই আর্থিক লেনদেন করা যায়। এছাড়াও এই ব্যাংকটি ক্ষেত্র বিশেষে টাকা উত্তোলন ও কেনাকাটার জন্য কোনো চার্জ নেয় না।
২.ইন্টারন্যাশনাল ব্যাঙ্ক এইচএসবিসি ব্যাংক (HSBC):
ইন্টারন্যাশনাল এই ব্যাংকটি সুরক্ষার জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া এই ব্যাংকটি বিভিন্ন ধরনের ক্যাশব্যাক অফার ও ছাড় ,ভ্রমণ সংক্রান্ত সুবিধা এবং অনেক পয়েন্ট রিওয়ার্ড সুবিধাও দিয়ে থাকে।
৩.ব্র্যাক ব্যাংক:এই ব্যাংকার মাধ্যমেও সহজেই অনলাইন লেনদেন করা যায়। বিভিন্ন ধরনের কেনাকাটায় ডিসকাউন্ট সুবিধাসহ মাসিক ইন্সটলমেন্ট সুবিধা এবং বিভিন্ন ই-কমার্স ওয়েবসাইটে বিশেষ ছাড়ও পাওয়া যায়।
৪.সিটি ব্যাংক:এই কার্ডটি আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপুর্ণ। ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল ফ্রি লাউঞ্জ সুবিধা,বিশেষ অফার,ইন্সটলমেন্ট সুবিধা এবং ফ্লেক্সিবল পেমেন্ট অপশন ইত্যাদি সুবিধা দিয়ে থাকে।
৫.স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক:এটিও কাস্টমার সার্ভিস ও উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিয়ে থাকে। এছাড়াও EMI সুবিধা,ফ্রি লাউঞ্জ সুবিধা,প্রচুর রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ক্যাশব্যাক, বিমান ভ্রমণে ছাড়সহ বিভিন্ন প্রিমিয়াম অফার দিয়ে থাকে।
এছাড়াও ভিসা কার্ড সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য পেতে আপনি ব্যাংকের হেল্পলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।
যে কোনো প্রয়োজনে হেল্পলাইন
১৬২৩০ (বাংলাদেশ থেকে )
+৮৮-০২-৮৩৩২২৩২ (বিশ্বের যে কোনো দেশ থেকে )