প্রিয় পাঠক- পাঠিকা গণ আজকের আর্টিকেলে আপনারা ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড কি? এর চার্জ ও ব্যবহার এবং ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে পার্থক্য এছাড়াও এই ডেবিট কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ড করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সমূহ কি কি প্রয়োজন এই কার্ড দুটির যাবতীয় তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে বাড়ছে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা। আজকাল আমরা অনেকেই ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বিভিন্ন ডিজিটাল লেনদেনে অব্যস্ত। তবে অনেকেরই এই কার্ড দুটি সম্পর্কে পরিপূর্ন ধারনা নেই। তাই আমার আজকের এই প্রতিবেদন তাদের উদ্দেশ্যে রচিত।
এক পলকে
ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে কিছু কথা
আধুনিক যুগের আধুনিক কাজের উদ্দেশ্যে বহুল ব্যাবহৃত এই দুটি কার্ড। ক্যাশ বহন,কেনাকাটা ,পাওনা পরিশোধ ,অনলাইন পেমেন্ট, বিভিন্ন ক্ষেত্রে লেনদেন অর্থাৎ কোনো কিছুর মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে বর্তমানে এই কার্ড দুটির ব্যবহার অনেক বেশি। অর্থাৎ সাধারণ দোকানের কেনাকাটা থেকে শুরু করে অনলাইন কেনাকাটার এই বিশদ ব্যাপ্তিতে এই কার্ড দুইটির ব্যবহার ব্যাপক।
এছাড়াও এই কার্ডটি ব্যাবহারে ক্ষেত্রে আপনি বিশেষ কিছু সুবিধাও পাচ্ছেন যেমন মানিব্যাগে টাকা বহন করার চেয়ে এই পাতলা কার্ডটি ব্যবহার করা বেশি সুবিধাজনক কারণ বর্তমানে এই কার্ড গুলো ব্যবহার করে টাকা উত্তোলনের ব্যবস্থা সব জায়গাতেই আছে। আপনি চাইলে যে কোনো জায়গা থেকে বিভিন্ন ব্যাংকার ATM বুথ থেকে যে কোনো সময় টাকা উত্তোলন করতে পারবেন অর্থাৎ এই কার্ড দুটি ব্যবহারের অনেক সুবিধাদি রয়েছে এবং আপনি চাইলে এই সুবিধা সমূহ উপভোগ করতে পারবেন।
উল্লেখিত কার্ড দুটি দেখতে একই রকম এবং উভয় কার্ডের নম্বরও ১৬ডিজিট বিশিষ্ট। এছাড়াও উভয় কার্ডে থাকে ইএমভি চিপ,মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, সিভিভি কোড।তবে দেখতে একই রকম হলেও কার্ড দুইটির মধ্যে রয়েছে বেশ পার্থক্য। কার্ড দুটির অনেক ব্যবহারকারীরাও এখনো জানেন না কার্ড দুটির মধ্যে আসল পার্থক্য কি। আজকের এই প্রতিবেদনে এই পার্থক্যই তুলে ধরা হবে
ডেবিট কার্ড কি ? ডেবিট কার্ড বলতে কি বুঝায়
ডেবিট কার্ড বলতে বুঝায় এটি আপনার নিজস্ব ব্যাঙ্ক একাউন্টের সাথে যুক্ত থাকে এবং কোনো ক্ষেত্রে এই কার্ডটি ব্যবহার করলে ব্যাঙ্ক আপনার একাউন্ট থেকে সরাসরি টাকা কেটে নিবে। অর্থাৎ যে কার্ড আমাদের নিজস্ব ব্যাঙ্ক একাউন্ট থেকে টাকা কেটে নিয়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের পেমেন্ট করতে সাহায্য করে সেটাই মূলত ডেবিট কার্ড।আরো সহজ ভাবে বলতে গেলে যে কার্ডে নিজের জমানো টাকা থাকে সেটি হলো ডেবিট কার্ড। কোনো ব্যাংকে সেভিংস একাউন্ট করলে সেই একাউন্টের সাথে ব্যাঙ্ক হতে এই কার্ডটি প্রদান করা হয়
এই কার্ড দ্বারা কেনাকাটা করলে ব্যাংক আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে সাথে সাথেই টাকা কেটে নিবে। এই কার্ডটি ব্যাবহারে কেনাকাটার পাশাপাশি এটিএম বুথ থেকেও টাকা উত্তোলন করা যায়।
ডেবিট কার্ডের সুবিধা সমূহ
জনপ্রিয় এই কার্ডটি গ্রাহককে অনেক ধরণের সুবিধা প্রধান করে থাকে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সুবিধা নিম্নে উল্লেখ্য করা হলো :
1. বার্ষিক ফি :ডেবিট কার্ডের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ব্যাংকের কোনও বার্ষিক ফি প্রযোজ্য হয় না , যদিও মাঝে মধ্যে পরিষেবা অথবা রক্ষণাবেক্ষণ চার্জ হিসাবে অল্প কিছু পরিমাণ এমাউন্ট কাটা হতে পারে।
2. সুদ চার্জ :কোন সুদ চার্জ নেই, যেহেতু এক্ষেত্রে টাকা সরাসরি গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে নেওয়া হয় তাই ডেবিট কার্ডগুলিতে কোনও সুদের চার্জ নেই।
3. সুরক্ষা : প্রত্যেকটি লেনদেনের ক্ষেত্রে আপনাকে পিন কোড দিতে হবে তাই সেগুলি বেশ সুরক্ষিত৷ তাছাড়াও, অধিকাংশ ব্যাংক 24×7 গ্রাহক পরিষেবা দিয়ে থাকে । এটি হারানোর ক্ষেত্রে, আপনি অতি দ্রুত আপনার সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করে কার্ডটি ব্লক করতে পারবেন।
4. জরুরী : এই কার্ডটি সরাসরি আপনার ব্যাংক একাউন্টের সাথে যুক্ত থাকায় , আপনি খুব সহজেই এটি দ্বারা যে কোনো সময় যে কোনো জায়গা থেকে যেকোনো ব্যাংক থেকে সহজেই টাকা উত্তোলন করতে পারবেন যেমন:এটিএম।
5. বাজেটের অনুশীলন :ক্রেডিট কার্ডে ধারা আপনি টাকা না থাকলেও যেকোনো কিছু কিনতে পারবেন । কিন্তু ডেবিট কার্ড দ্বারা এরকম সুযোগ নেই এক্ষেত্রে আপনার একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে কেননা আপনি সরাসরি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে খরচ করছেন তাই লোন নেওয়ার সুযোগ নেই ৷
6. স্মার্ট পছন্দ :তাছাড়া এই কার্ডটির একটি বিশেষ সুবিধা হল কোন বকেয়া নেই, সুদ নেই, কোন ক্রেডিট স্কোর নেই, শুধু আপনি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কত টাকা খরচ করবেন তাই কেটে নেওয়া হবে। অতএব বলা যায় ক্রেডিট কার্ডের চাইতে ডেবিট কার্ড নিঃসন্দেহে একটি স্মার্ট কার্ড।
ডেবিট কার্ড চার্জ
ব্যাংকিং লেনদেন সহজ করার জন্য আমরা বর্তমানে ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে থাকি।বাংলাদেশে বেশ কিছু জনপ্রিয় ব্যাংক রয়েছে যারা ডেবিট কার্ড প্রদান করে থাকে তবে এখানে আমরা ইসলামী ব্যাংকের ডেবিট কার্ড সম্পর্কে জানব।
এই কার্ডের কোন ইস্যু ফি নেই তবে ছয় মাস অন্তর অন্তর ২০০ টাকা একটা চার্জ কেটে নেওয়া হবে তার সঙ্গে ১৫%ভ্যাট কেটে নেওয়া হবে অর্থাৎ ২৩০ টাকা এবং বছরে ৪৬০ টাকা কেটে নেওয়া হবে।
এই কার্ড ব্যবহার করে আপনি ইসলামী ব্যাংকে ব্রাঞ্চ থেকে সরাসরি টাকা উত্তোলন করতে গেলে পোস্ট ট্রানজেকশনের মাধ্যমে একদিনে সর্বোচ্চ তিন লক্ষ টাকা উত্তোলন করতে পারবেন ।
অথবা ইসলামী ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে একদিনে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করতে পারবেন এবং প্রতি ট্রানজেকশনে ২০ হাজার করে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন এক্ষেত্রে কোন চার্জ কাটা হবে না।
ডেবিট কার্ড পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
পূরণকৃত ফর্ম বা আবেদন পত্র
জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
ড্রাইভিং লাইসেন্স অথবা পাসপোর্ট
ট্যাক্স রিটার্ন কপি অথবা TIN সার্টিফিকেট লাগবে
২ কপি পাসপোর্ট সাইজ রঙিন ছবি
ক্রেডিট কার্ড কি ? ক্রেডিট কার্ড বলতে কি বুঝায়
ক্রেডিট মানে ধার নেওয়া। ক্রেডিট কার্ড বলতে বুঝায় কার্ড প্রদানকারী সংস্থা বা ব্যাঙ্ক যা আমাদেরকে তাৎক্ষণিক ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে আমাদেরকে পেমেন্ট করতে সাহায্য করে।
অর্থাৎ যে কার্ডের মাধ্যমে কোনো ব্যাঙ্ক বা সংস্থা আপনাকে কেনাকাটার সময় বা অন্য যে কোনো ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে পেমেন্ট করতে সুবিধা প্রদান করে থাকে তাই ক্রেডিট কার্ড।
আপনাকে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে টাকা খরচ করার পর একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সুদ ছাড়া অথবা নির্দিষ্ট সময় পরে সুদসহ ধার করা টাকা ব্যাংকে ফেরত দিতে হবে।
অর্থাৎ ধারে জিনিস কেনাকাটার ডিজিটাল রূপ হচ্ছে ক্রেডিট কার্ড। তাই কিছু কিনলে ক্রেতার হয়ে ব্যাংক তা ঋণ পরিশোধ করে থাকে। ক্রেতাকে ব্যাংকে টাকা বা ধার ফেরত দেওয়ার জন্য ২০-৫০ দিন সময় দেওয়া হয়।
ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা সমূহ
আর্থিক লেনদেন: বর্তমানে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে । অধিক কেনাকাটার ক্ষেত্রে এই ক্রেডিট কার্ডটি খুবই কাজে আসে। কেননা এর মাধ্যমে আপনি অধিক টাকা ধার নিয়ে আপনার প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সম্পন্ন করতে পারবেন।
দ্রুত লেনদেন :এই কার্ডের মাধ্যমে কোনো পণ্য কিনে কয়েক মাস ধরে মূল্য পরিশোধ করা যায়। এক্ষেত্রে ঋণেরপরিমান খুব বেশি হয় না।তবে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে মূল্য পরিশোধ করতে হবে। তা না হলে সুদ সমেত জরিমানা হতে পারে।
সুরক্ষা:সাধারণত ডেবিট কার্ড চেক ব্যবহারের তুলনায় ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বেশি নিরাপদ। কেননা এ ক্ষেত্রে আপনার কার্ডটির ভুলত্রুটি বা জালিয়াতি হলে অথবা চুরি হলেও আপনি আপনার টাকা ফেরত পাবেন।
ঋণের সুবিধা:সাধারণত ক্রেডিট কার্ড ক্ষেত্রে বিশেষ করে বিদেশের ব্যাংক গুলোতে শূন্য শতাংশ সুদে ঋণ দেয়। এক্ষেত্রে মাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ এমাউন্ট পরিশোধ করতে হয় । আবার কোনো কোন কার্ডে ঋণে সুদের হার অনেক হয় থাকে।
ব্যয়ের সাথে আয় :জনপ্রিয় এই ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন অফার দেওয়া হয়। যেমন: ক্যাশ ব্যাক অফার, স্পেশাল ডিসকাউন্ট। দেশের বাহিরে বেড়াতে গেলে, হোটেল বা রেস্টুরেন্টে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারে প্রায় সময়ই মূল্যছাড় বা ডিসকাউন্ট দেওয়া হয় এমনকি প্লেনের টিকিট কাটতেও অনেক সময় পাওয়া যায় বিশেষ ডিসকাউন্ট ।
পরিবর্তনযোগ্য : এক্ষেত্রে আপনি একটি অফারের ক্রেডিট কার্ড নিয়ে পরবর্তীতে সেটি পরিবর্তন করতে চাইলে এটি পরিবর্তন করে অন্য অফারের কার্ড নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে হয়তো সামান্য টাকা বেশি লাগতে পারে।
ক্রেডিট কার্ড বা খিদমাহ কার্ড চার্জ
এখানে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড বা খিদমাহ কার্ডের চার্জ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।ইসলামী ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড লিমিট সর্বোচ্চ তিন লক্ষ টাকা।বার্ষিক রিনিউয়াল ফি ২৫০০ টাকা, মান্থলি মেইনটেনেন্স ফি ১৫০০ টাকা।
এছাড়াও আপনি যদি পেমেন্ট দিতে লেট করেন তবে লেট পেমেন্ট ফ্রি হচ্ছে ৭৫০টাকা। এছাড়াও রয়েছে কার্ড রিপ্লেসমেন্ট ফি ৬০০ টাকা এবং এসএমএস ফি ২০০ টাকা এছাড়াও আপনি যদি ক্রেডিট কার্ডের পিন রিপ্লেসমেন্ট করতে চান সেক্ষেত্রে ১০০ টাকা চার্জ প্রযোজ্য হবে।
ক্রেডিট কার্ড পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
জাতীয় পরিচয় পত্র, পাসপোর্ট অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফটোকপি ,আবেদনকারী দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছব,এমপ্লয়ি আইডি কার্ড, ট্রেড লাইসেন্স অথবা প্রফেশনাল বডি মেম্বারশিপ ছবি,সেলারি সার্টিফিকেট এবং ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট,টিআইএন ও ইউটিলিটি বিলের কপি ।
ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে পার্থক্য টেবিল আকারে
পার্থক্যের ভিত্তি | ডেবিট কার্ড | ক্রেডিট কার্ড |
---|---|---|
ব্যবহারের যোগ্যতা | জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পাওয়া যায় | নির্দিষ্ট আয়, ক্রেডিট স্কোর এবং লেনদেনের যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রদান করা হয় |
প্রদানকারী সংস্থা | শুধুমাত্র ব্যাংকসমূহ প্রদান করে | ব্যাংক ও বিভিন্ন ক্রেডিট কার্ড সংস্থা প্রদান করে |
ধরন | সীমিত কয়েকটি ধরন থাকে | বিভিন্ন ক্যাটাগরির (ক্যাশব্যাক, রিওয়ার্ডস, ট্রাভেল, শপিং ইত্যাদি) কার্ড পাওয়া যায় |
টাকার উৎস | ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কাটা হয় | ব্যাংক বা কার্ড প্রদানকারী সংস্থা থেকে টাকা ধার নেওয়া হয় |
ব্যবহারের সীমা | নিজস্ব অ্যাকাউন্টে থাকা টাকার পরিমাণ অনুযায়ী সীমাবদ্ধ | নির্দিষ্ট ক্রেডিট লিমিটের মধ্যে ব্যবহারের সুযোগ |
ব্যাংক অ্যাকাউন্টের প্রয়োজনীয়তা | বাধ্যতামূলক | বাধ্যতামূলক নয় |
মাসিক স্টেটমেন্ট | প্রয়োজন নেই | মাসিক স্টেটমেন্ট প্রদান করা হয় ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিল পরিশোধ করতে হয় |
সুদের খরচ | সুদের কোনো খরচ নেই | নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ না করলে সুদ প্রযোজ্য |
বার্ষিক ফি | সাধারণত কম বা নেই | নির্দিষ্ট পরিমাণ বার্ষিক ফি কাটা হয় |
ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে পার্থক্য বিস্তারিত
ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ডের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য আমি বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টের অনলাইন সাপোর্ট নাম্বারে কল করে যে সকল ইনফরমেশন পেয়েছি তা আপনাদের সাথে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো ।
যোগ্যতার ভিত্তিতে পার্থক্য
ডেবিট কার্ডের ক্ষেত্রে কোনো রকম যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না। সাধারণত জাতীয় পরিচয়পত্র বা NID কার্ড থাকলেই ব্যাঙ্ক একাউন্ট করে ডেবিট কার্ডের জন যোগ্য হওয়া যায়। অর্থাৎ ১৮ বছরের উপরে হলেই আপনি এই কার্ডের জন্য যোগ্য হতে পারবেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে ১৮ বছরের কম বয়সেও ডেবিট কার্ড পাওয়া যায়।
অপরদিকে,ক্রেডিট কার্ড প্রদানকারী ব্যাঙ্ক বা সংস্থাসমূহ বিশেষ শর্তসাপেক্ষে ক্রেডিট কার্ড প্রধান করে থাকে। ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে ১৮ বছরের বেশি বয়স হতে হবে এবং নূন্যতম ইনকাম সোর্স , ভালো ক্রেডিট স্কোর,লেনদেনের বোঝা ইত্যাদি বিষয় দেখে তবেই কার্ডটি প্রদান করা হয়।
কার্ড প্রদানকারী সংস্থা ভিত্তিতে পার্থক্য
কেবল ব্যাংকসমূহ তাদের অ্যাকাউন্টের সাথে ডেবিট কার্ড প্রোভাইড করে থাকে। তবে কিছু নতুন টেক কোম্পানি কিছু ট্র্যাডিশনাল ব্যাংকের সঙ্গে মিলে নতুন ব্যাঙ্ক যেমন:ফানি মানি নামে বিশেষ সুবিধা ও নতুন ধরনের সম্পূর্ণ আধুনিক ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে ডেবিট কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে।
অপরদিকে, ক্রেডিট কার্ড ব্যাংকসমূহ ছাড়াও অনেক ক্রেডিট কার্ড প্রদানকারী সংস্থাও এটি প্রোভাইড করে থাকে। আবার অনেক সময় নিজে ক্রেডিট কার্ড প্রোভাইডার না হয়েও বিভিন্ন কোম্পানি বা ব্যাংকের সাথে মাইল কো ব্র্যান্ডেড ক্রেডিট কার্ড প্রোভাইড করে থাকে।
ধরনফেরের ভিত্তিতে পার্থক্য
ব্যাংকের পক্ষ থেকে যে সকল ডেবিট কার্ড প্রোভাইড করা হয় তাতে পাওয়া সুবিধা সমূহ সীমিত কয়েক ধরনেরই হয়।
অপরদিকে,ক্রেডিট কার্ড প্রোভাইডার সংস্থাগুলো ক্যাশব্যাক,রিওয়ার্ডস,ক্লাসিক,ফুয়েল,শপিং,লাইফ স্টাইল,ট্রাভেল,বিজনেস ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের কার্ড ব্যবহারের জন্য ও বিভিন্ন কো-ব্যান্ডেড ক্রেডিট কার্ডও প্রোভাইড করে থাকে।
টাকার উৎসের ভিত্তিতে পার্থক্য
কার্ড ব্যবহার করা বলতে এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন বা কোথাও টাকা প্যামেন্ট করা বোঝায়। ডেবিট কার্ডে ক্ষেত্রে এই টাকা নিজস্ব ব্যাঙ্ক একাউন্ট থেকে আসে।
অপরদিকে ,ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে যেই টাকাটা পেমেন্ট করা হয় তা ব্যবহারকারীর নিজস্ব টাকা নয় বরং সেই টাকাটা আসে কার্ড প্রদানকারী সংস্থা বা ব্যাঙ্ক থেকে।
ব্যবহারের সীমা ভিত্তিতে পার্থক্য
ডেবিট কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো ঋণ সীমা থাকে না। নিজের ব্যাঙ্ক একাউন্টে যত টাকা আছে কার্ডটি ব্যবহার করে ঠিক তত টাকাই খরচ করা যায়। তবে এটিএম থেকে টাকা উত্তলনের ক্ষেত্রে বিশেষ অংকের লিমিট থাকে।
অপরদিকে,ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ঋণ সীমা থাকে।এ ক্ষেত্রে আপনার আয়, কার্ডের বয়স ও ক্রেডিট স্কোর ইত্যাদি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে একটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে আপনাকে ক্রেডিট কার্ড প্রদান করা হবে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ওই নির্দিষ্ট সীমার বেশি ব্যবহার করা যায় না।
ব্যাংক অ্যাকাউন্টের প্রয়োজনীয়তা ভিত্তিতে পার্থক্য
ডেবিট কার্ডের ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক একাউন্ট থাকা বাধ্যতামূলক।
অপরদিকে,ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক একাউন্ট থাকা বাধ্যতামূলক নয়। এক্ষেত্রে ব্যাংকে একাউন্ট করা না থাকলেও সেই ব্যাঙ্ক থেকে ক্রেডিট কার্ড নেওয়া যায়।
মাসিক স্টেটমেন্টের ভিত্তিতে পার্থক্য
ডেবিট কার্ডের ক্ষেত্রে যেহেতু কোনো ধার -দেনার প্রয়োজন পরে না তাই ডেবিট কার্ডের জন্য কোনো মাসিক স্টেটমেন্টের প্রয়োজন হয় না।
অপরদিকে,ক্রেডিট কার্ডের জন্য প্রতিমাসের একটা নির্দিষ্ট সময়ে সেই মাসের সকল খরচের হিসেব সম্বলিত একটা স্টেটমেন্ট দিতে হয় এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই বিল পরিশোধ করতে হয়।
সুদের ভিত্তিতে পার্থক্য
ডেবিট কার্ডের ক্ষেত্রে সুদের খরচ নেই কেননা এটি অপনার নিজস্ব টাকা।
অপরদিকে,ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে যেহেতু কার্ড প্রদানকারী সংস্থা বা ব্যাঙ্ক থেকে টাকা ধার নেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে কার্ড ব্যবহারের সময় থেকে স্টেটমেন্টের সময় পর্যন্ত ও স্টেটমেন্ট জেনারেট করার পর আরো ২০ দিন সময় থাকে স্টেটমেন্ট বিল পরিশোধ করার জন্য। এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপনার খরচকৃত টাকা বা বিল পরিশোধ করতে পারলে সুদ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে নির্ধারিত সময়ের পরে বিল পরিশোধ করতে গেলে আপনার নির্দিষ্ট বিল মেটানোর পাশাপাশি সুদও দিতে হবে।
বার্ষিক ফি ভিত্তিতে পার্থক্য
ডেবিট কার্ড ব্যাবহারে ব্যাঙ্ক থেকে সাধারণত অল্প মূল্যের একটা বার্ষিক ফি কাটে আবার অনেক ব্যাঙ্ক এই ফি টা নেয় না।তবে ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বার্ষিক ফি কেটে নেওয়া হয় ।
ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কিত আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন এবং আমাদের ওয়েবসাইটে মাস্টার কার্ড এবং ভিসা কার্ড এবং সিটি ব্যাংকের মাস্টার কার্ড ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন প্রকার ক্রেডিট এবং ডেবিট কার্ড সম্পর্কিত তথ্য রয়েছে চাইলে আপনারা বিস্তারিত জানতে পারেন