একজন পুরুষের প্রজনন তন্ত্রের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো তার অন্ডকোষ। এটি ছেলেদের সবচাইতে সংবেদনশীল স্থানও বটে। তবে প্রায়ই অন্ডকোষে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও রোগ দেখা দেয়। তাই আমাদের সকলেরই অন্ডকোষের রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা থাকা উচিত। তাহলে চলুন অন্ডকোষের রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা নেওয়া যাক।
তাই আজ আমরা পুরুষদের প্রজনন সিস্টেমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ সম্পর্কে কথা বলব। যা আমরা টেস্টিকলস বা অণ্ডকোষ হিসাবে জানি।
এক পলকে
অন্ডকোষের রোগ ও চিকিৎসা সংক্রান্ত এই পোষ্টে আপনারা যা জানতে পারবেন
অন্ডকোষের রোগ ও চিকিৎসা সংক্রান্ত এই পোষ্টে আমরা নিম্নোক্ত বিষয়গুলি ছবিসহ বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে আপনাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। আশা করি অন্ডকোষের রোগ ও চিকিৎসা সংক্রান্ত এই পোষ্টটি আপনাদের কিছুটা হলেও উপকারে আসবে।
- অন্ডকোষ কি
- অন্ডকোষের রোগ ও চিকিৎসা
- অন্ডকোষের প্রদাহ বা ব্যাথা
- অন্ডকোষের প্রদাহ বা ব্যাথা এর চিকিৎসা
- অন্ডকোষের হার্নিয়া
- হার্নিয়া এর চিকিৎসা
- অন্ডথলি ফুলে যাওয়া
- অন্ডথলি ফুলে যাওয়ার চিকিৎসা
- অন্ডকোষের টিউমার
- অন্ডকোষের টিউমার এর চিকিৎসা
- অন্ডকোষের হাইড্রোসিল
- হাইড্রোসিল এর চিকিৎসা
- অন্ডকোষের টরসন
- অন্ডকোষের টরসন এর চিকিৎসা
[irp]
অন্ডকোষ কি
আল্লাহ তায়ালা এই পৃথিবীতে মানুষ জাতি সৃষ্টি করেছেন এবং তাদেরকে প্রজনন ক্ষমতা দান করেছেন, যেনো তারা নিজেরা তাদের নিজেদের মতো করে জনসংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে। পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের তাদের নিজস্ব আলাদা আলাদা প্রজনন সিস্টেম বা প্রক্রিয়া আছে। যখন কোনো পুরুষ এবং মহিলা উভয় পরস্পরের সাথে যৌন মিলন ঘটায় তখন তাদের উভয়ের প্রজনন ক্ষমতার বিনিময়ে নতুন একটা জীবনের জন্ম হয়।
মূলত পুরুষ প্রজনন অঙ্গের নীচে বিদ্যমান থলিকেই অন্ডকোষ বলা হয়। টেস্টিস বা অণ্ডকোষ হচ্ছে একটি পুরুষ প্রজনন অঙ্গ। এখানে স্পার্ম বা শুক্রাণু তৈরি হয় এবং এই স্পার্ম বা শুক্রাণুর সাথে মেয়েদের ডিম্বাণুর মিলনের ফলেই সন্তানের জন্ম হয়।
একজন স্বাভাবিক পুরুষের শরীরে টেস্টিসের সংখ্যা দুইটি। এর জন্ম হচ্ছে পেটের ভেতর। টেস্টিস দুটি শিশুর মায়ের পেটে বেড়ে ওঠার সাথে সাথে নিপের দিকে নামতে থাকে এবং সন্তান ভুমিষ্ঠ বা জন্ম হওয়ার পূবের্ই অন্ডকোষ থলিতে অবস্থান নেয়।
পুরুষের এই সংবেদনশীল অঙ্গটি দেহ গহ্বরের বাইরে থেকে থাকে। কারণ দেহের অভ্যন্তরের তাপমাত্রা অধিক থাকে বিধায় শুক্রাণু নিষেকের উপযোগী থাকে না। আর তাই অন্ডকোষ দুইটি দেহ গহ্বরের বাইরে অন্ডথলি নামক একটি থলির মধ্যে থাকে।
অন্ডকোষের রোগ ও চিকিৎসা
অন্ডকোষ থেকে যেমন শুক্রাণু তৈরী হয়ে থাকে, তেমনি টেস্টোস্টেরন হরমোনও তৈরী করে এই অন্ডকোষ। পুরুষের এই অন্ডকোষ দুটি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। নিচে সাধারণ কিছু অন্ডকোষের রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা করা হলো। আশা করি পুরো আলোচনাটি একটু সময় নিয়ে ভালোভাবে পড়বেন।
অন্ডকোষের প্রদাহ বা ব্যাথা
অন্ডকোষের প্রদাহ বা ব্যাথা অন্ডকোষের এক ধরনের জীবানু সংক্রমণের কারণে হয়। অন্ডকোষের প্রদাহ বা ব্যাথা এর এক্ষেত্রে রোগীর প্রচন্ড বা অনেক জ্বর হয় এবং অন্ডকোষ ব্যাথায় ফুলে যায়। পাশাপাশি প্রস্রাবের সময় প্রচন্ড ব্যথা, বমি বা বমি-বমি ভাব থাকতে পারে।
অন্ডকোষের প্রদাহ বা ব্যাথা এর চিকিৎসা
অন্ডকোষের প্রদাহ বা ব্যাথা এর চিকিৎসায় সাধারণত অভিজ্ঞ ডাক্তারেরা ইনফেকশন সারাতে অ্যান্টিবায়োটিক এবং ব্যথা বা প্রদাহ কমানোর জন্যে ব্যথানাশক পেইনকিলার ঔষধ দিয়ে থাকেন। এছাড়াও ভালো বিশ্রাম ও বরফ বা আইস-প্যাক ব্যবহারের সাজেশান দিয়ে থাকেন।
অন্ডকোষের হার্নিয়া
অন্ডকোষের আর একটি কমন রোগ হলো অন্ডকোষের হার্নিয়া। বেশির ভাগ সময়ই হার্নিয়াতে অন্ডকোষে ব্যাথা হয় না কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত হার্নিয়া হয়ে থাকলে পেটের মাঝে নাড়ী ভুড়িতে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ব্যাঘাত ঘটে বা বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে জরুরীভাবে চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায়।
হার্নিয়া এর চিকিৎসা
দৈনন্দিন জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং প্রাথমিক চিকিৎসায় হার্নিয়া এর উপসর্গ কিছুটা কমানো সম্ভব। তবে কার্যকরভাবে পরিপূর্ণরুপে হার্নিয়া চিকিৎসার একমাত্র উপায় হচ্ছে অস্ত্রপচার বা অপারেশন। অন্ডকোষের হার্নিয়ার প্রকৃতি, রোগের উপসর্গ এবং রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সাধারণত একজন অভিজ্ঞ সার্জন অস্ত্রপচার বা অপারেশন এর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন।
অন্ডথলি ফুলে যাওয়া
অন্ডকোষের অনেক রোগের মধ্যে অন্ডথলিটি ফুলে যাওয়া অন্ডকোষের অন্যতম একটি স্বাভাবিক রোগ। অনেক পুরুষের মাঝেই এই রোগটি দেখা যায়। সাধারণত অন্ডকোষের অস্বাভাবিক/অধিক বৃদ্ধির কারণেই এই অন্ডথলিটি ফুলে যায়।
যেকোনো বয়সের পুরুষেরই অন্ডথলি ফুলে যাওয়া নামক এই সমস্যাটি হতে পারে। এর সাথে সাথে ব্যাথা হইতে পারে আবার নাও হইতে পারে।
অন্ডথলি ফুলে যাওয়ার চিকিৎসা
অন্ডথলি ফুলে যাওয়ার চিকিৎসায় প্রথমেই ডাক্তারের কাছে না যেয়ে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখা যেতে পারে। ফোলা-ফোলা ভাব দেখা দেওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে অন্ডথলিতে বরফের ঠান্ডা সেক দিন। সিটজ বাথও নিতে পারেন। এতে অন্ডথলির ফোলা কমাতে সাহায্য করবে।
আরো পড়ুনঃ কাচা আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রচুর বিশ্রাম নিন এবং আপাতত কঠিন পরিশ্রমের কাজগুলো এড়িয়ে চলুন। এর পরেও যদি অন্ডথলি ফুলে যাওয়ার সমস্যা সমাধান না হয় তাহলে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
অন্ডকোষের টিউমার
অন্ডকোষের রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনার এই ভাগে আমরা জানবো অন্ডকোষের টিউমার সম্পর্কে। বিভিন্ন কারণে টেস্টিস বা অন্ডকোষের এই টিউমার এর সমস্যা হয়ে থাকে। জন্মের পর টেস্টিস বা অন্ডকোষ সঠিক স্থানে না থাকলে এই টেস্টিসের টিউমার হওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে।
[irp]
টিউমার হলে অন্ডকোষ সাধারনত অস্বাভাবিক আকারে বড় হতে থাকে। সাধারণত অন্ডকোষের টিউমার পরবর্তীতে ক্যান্সারে পরিণত হয়ে থাকে। তাই সঠিক সমইয়ে টিউমারের চিকিৎসা না করলে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং এর কারনে মৃত্যুও ঘটতে পারে।
অন্ডকোষের টিউমার এর চিকিৎসা
টিউমারের ধরন, পর্যায় এবং সেই সঙ্গে টিউমারের কারণের উপর নির্ভর করে টিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। অন্ডকোষের টিউমার এর চিকিৎসার ক্ষেত্রে সাধারণত সার্জারি, রেডিয়েশন থেরাপি বা কোমোথেরাপি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
অন্ডকোষের হাইড্রোসিল
এ রোগ ধীরে ধীরে বা আস্তে আস্তে হয় এবং প্রাথমিক অবস্থায় তেমন কোন সমস্যা অনুভব হয় না। আস্তে আস্তে অন্ডকোষ ফুলতে শুরু করে কিন্তু ব্যথা হয় না। এ রোগে অন্ডকোষের ফোলায় কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাসও লাগতে পারে। তবে অন্ডকোষে হাইড্রোসিলের আকৃতি বেড়ে গেলে রোগী অনেকটা অস্বস্তিবোধ করা শুরু করে।
হাইড্রোসিল এর চিকিৎসা
অন্ডকোষের হাইড্রোসিলের চিকিৎসার জন্য তেমন কোন ওষুধ নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হাইড্রোসিল ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে আপনা আপনিই ভাল হয়ে যায়। যদি সেটি না হয় তাহলে সকল ধরনের জটিলতা এড়াতে অভিজ্ঞ ডাক্তাররা সাধারণত অন্ডকোষের সার্জারির পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
অন্ডকোষের টরসন
অন্ডকোষের টরসন হলে টেস্টিসে বা অন্ডকোষে হটাৎ প্রচন্ড ব্যথা হয়। পাচ থেকে ত্রিশ বছর বয়সের মধ্যে এই রোগের আক্রমন বেশি দেখা যায়। অন্ডকোষের টরসন রোগে টেস্টিস রগের সাথে প্যাঁচ খেয়ে যায়, যার ফলে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং টেস্টিস বা অন্ডকোষ তার নিজ কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
অন্ডকোষের টরসন এর চিকিৎসা
টেস্টিকুলার টর্সন বা অন্ডকোষের টরসন ঠিকভাবে সারাতে সার্জারির প্রয়োজন হয়। কিছু ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ডাক্তাররা স্ক্রোটাম (ম্যানুয়াল ডিটরসন) এ চাপ দিয়ে অণ্ডকোষটি ঠিক করতে সক্ষম হতে পারে। কিন্তু অন্ডকোষের টর্সন যাতে আবার পুনরায় না হয় তার জন্য অবশ্যই সার্জারির প্রয়োজন হবে।
অন্ডকোষের রোগ ও চিকিৎসা নিয়ে আমাদের শেষকথা
এই পোষ্টে আমরা কিছু অন্ডকোষের রোগ ও চিকিৎসা বিষয়ে বলেছি। মনে রাখবেন অন্ডকোষের রোগ ও চিকিৎসা সাধারণ সর্দি-জ্বরের মতো নয় যে আপনি নিজে নিজেই ফার্মেসি থেকে ঔষধ কিনে খাবেন। অবশ্যই আপনাকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সরনাপন্ন হতে হবে। তবে আশা করি অন্ডকোষের রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কিত আমাদের পোষ্টটি অন্ডকোষের রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে আপনাকে সচেতনতা ও বড় ধরণের জটিলতা এড়াতে সহায়তা করবে। অন্ডকোষ বা টেস্টিসের যে কোন ধরনের অস্বাভাবিকতা দেখা দিলেই জরম্নরী ভিত্তিতে সার্জনের শরণাপন্ন হওয়া অবশ্যক।
I am Hasina Khatun, working in a private bank in Bangladesh and also writing for this website in my free time.